বহুল ব্যবহূত কয়েক প্রজাতির ফাঁপা কান্ড বিশিষ্ট ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ বাঁশ। বাঁশের বিস্তৃতি অত্যন্ত ব্যাপক। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কাজে লাগে এই উদ্ভিদ।বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী তৈরি ছাড়াও বাঁশ থেকে আচারসহ নানা ধরনের খাবারও তৈরি হয়। বিভিন্ন রোগ সারাতেও ব্যবহার করা হয় বাঁশ।
সদ্য অঙ্কুরিত বাঁশের চারাকে কোড়ল বলা হয়। হালকা হলুদ এবং সবুজের মিশ্রণে এটি দেখতেও বেশ। কোড়ল খুব নরম ও আর্দ্র। বাংলাদেশে সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি আদিবাসীরা এটি বেশি খেয়ে থাকেন। তবে ভারতের মেঘালয়, আসাম ও হিমাচল প্রদেশ, নেপাল, ভুটান, চীন, কোরিয়া ও জাপানে বাঁশের কোড়ল খুব জনপ্রিয়।
চীনে কিডনির রোগে আক্রান্তদের সুস্থ করে তুলতে ব্যবহার করা হয় বাঁশ। এমনকী, ক্যানসার আক্রান্তদের দেওয়া হয় বাঁশের পাতা ও শিকড় থেকে তৈরি ওষুধ।
ইন্দোনেশিয়ায় হাড়ের রোগ সারাতে পানি করতে দেওয়া হয় বাঁশের ভিতরে জমে থাকা পানি।
তাজা বাঁশের কোড়লে যা যা রয়েছে- পানি- ৮৮ থেকে ৯৩ শতাংশ, প্রোটিন- ১ দশমিক ৫ থেকে ৪ শতাংশ, চর্বি- শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ, চিনি- শূন্য দশমিক ৭৮ থেকে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ, সেলুলোজ- শূন্য দশমিক ৬০ থেকে ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ, খনিজ পদার্থ- ১ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়াও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিনও।
বাঁশের কোড়লে রয়েছে উপকারী সব উপাদান যা দেহের কোলেস্টরেলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। রক্তচাপ রাখে নিয়ন্ত্রণে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। হাঁপানি, ডায়াবেটিস, তীব্র জ্বর, মূর্ছা যাওয়া, মৃগী রোগ ইত্যাদি নিরাময়ে যথেষ্ট উপকার করে বাঁশ।
বাঁশ থেকে জামাকাপড়ও তৈরি করা যায়। বাঁশ থেকে তৈরি টি-শার্ট, মোজা, অন্তর্বাস বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠছে। শুধু পোশাকই না, বাঁশের গয়নাও বেশ জনপ্রিয়। বাঁশ থেকে তৈরি হয় কানের দুল, হার, বালার মতো গয়না।
বাঁশ ব্যবহার করে তৈরি নানা খাবারও বেশ জনপ্রিয়। শুধু চীন, জাপানের মতো দেশগুলোতেই নয়, ভারতেও বাঁশের তৈরি খাবার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বাঁশ দিয়ে তৈরি হয় আসবাবপত্রও। বাঁশের তৈরি খাট, চেয়ার, টেবল বেশ টেকসই।
বাঁশ দিয়ে এখন ডায়াপারও তৈরি করা হচ্ছে। জাপানের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ৫০ বার ধোয়ার পরেও ভাল থাকে বাঁশ দিয়ে তৈরি ডায়াপার।
বাঁশের শতাধিক প্রজাতি রয়েছে এবং পূর্ব, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অংশে বড় বড় আকারে এরা বেড়ে ওঠে। সারা বিশ্বে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ বাঁশের তৈরি বাড়িতে বাস করেন। ৭০ হেক্টর জমিতে যে পরিমাণে বাঁশ জন্মায়, তা থেকে ১,০০০ বাড়ি তৈরি করা যায়। জীবনধারণের নানা কাজে প্রয়োজনীয় উদ্ভিদ বাঁশের প্রজাতি-বৈচিত্র্যের দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীতে অষ্টম। বাংলাদেশে ৩৩ প্রজাতির বাঁশ রয়েছে। ৫০০ প্রজাতির বাঁশ নিয়ে বিশ্বে প্রথম অবস্থানে রয়েছে চীন। ২৩২ প্রজাতি নিয়ে ব্রাজিল রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। ১৩৯ প্রজাতি নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জাপান।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।